আদি পিতার ক্রোমোসোম

আমাদের সময় অষ্টম শ্রেণীতে পড়ানো হতো যে মানুষের ক্রোমোসোম ২৩ জোড়া। কিন্তু নাস্তিক নালায়েক বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানীরা সব অন্ধের মতো আমাদের নিকটাত্মীয় বলে বিশ্বাস করে যে গ্রেট এপদের — মানে শিম্পাঞ্জি, গরিলা, ওরাংউটান — ওদের ক্রোমোসোম ২৪ জোড়া। বিবর্তনবিরোধী বহু মহাবিজ্ঞানী ব্যাপারটাতে হো হো করে হেসে উঠে বলে, “মানুষ আর এসব বাঁদরের পূর্বপুরুষ যদি একই হবে, তাহলে আমাদের ক্রোমোসোম সংখ্যা ভিন্ন কেন? এতেই প্রমাণিত হয় মানুষ স্পেশাল সৃষ্টি।”

তো হিউম্যান জিনোম প্রজেক্টের পর যখন শিম্পাঞ্জির জিনোম সিকোয়েন্সও সম্পন্ন হলো, তখন সুযোগ হলো এ দুই জিনোমের মধ্যে কী আছে আরেকটু ভালো করে দেখা। কোথায় মিল, কোথায় অমিল, ইত্যাদি। ডিএনএ টেস্ট করে যেভাবে বাপ-মা নির্ণয় করা যায়, সেরকম অনেক জেনেটিক মার্কারের খোঁজ করা হলো যেগুলো থেকে আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পারি আদৌ মানুষ আর শিম্পাঞ্জির বাপ-দাদা কোন একসময় একই প্রজাতির ছিল কিনা।

বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী মানুষ আর শিম্পাঞ্জি ও অন্যান্য গ্রেট এপদের পূর্বপুরুষ একই ছিল। বাকি সবার ২৪ জোড়া করে ক্রোমোসোম, তাহলে আমাদের এক জোড়া কই গেল? হঠাৎ করে হাজার হাজার জিন সমেত এক জোড়া ক্রোমোসোম গায়েব হয়ে যাওয়া মানে নির্ঘাৎ‌ মৃত্যু। মূর্খ আওয়ামী বিবর্তনবাদীরা তখন বললো, “নিশ্চয়ই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পরে আমাদের পূর্বপুরুষের দুই জোড়া ক্রোমোসোম জোড়া লেগে এক হয়ে গেছে।” কী হাস্যকর কথা! বললেই হলো? প্রমাণ দেখাও।

ভারতের দালাল বিবর্তনবাদীরা তখন চিন্তায় পড়ে গেলো। আমাদের কাছে এখন মানুষ আর শিম্পাঞ্জি, দুই শালারই জিনোমের ডাটা আছে। যদি দেখা যায় মানুষের ক্রোমোসোমে শিম্পাঞ্জির ওই বাড়তি এক জোড়া ক্রোমোসোমের অস্তিত্ব নাই, তাহলেই খেলা শেষ। কীয়েক্টা অবস্থা।

এবারে ছোটবেলায় পড়ে আসা ক্রোমোসোমের গঠণটা একটু রিভিশন দেয়া দরকার। ক্রোমোসোমের দুই প্রান্তে থাকে টেলোমিয়ার নামে একটা অংশ। মাঝখানে থাকে সেন্ট্রোমিয়ার। এখন যদি দুইটা ক্রোমোসোম একটার প্রান্তে আরেকটা যুক্ত হয়, তাহলে আমরা যে একটা ক্রোমোসোম পাবো, তাতে দেখা যাবে মাঝখানে এক জোড়া টেলোমিয়ার সিকোয়েন্স এবং এর দুই পাশে একটা করে সেন্ট্রোমিয়ার। আদৌ কি আমাদের আছে এমন কোন ক্রোমোসোম?

একটু খোঁজ নিতেই দেখা গেলো এই বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায় আমাদের দুই নাম্বার ক্রোমোসোম (ফান ফ্যাক্টঃ ক্রোমোসোমগুলোকে নাম্বার দিয়ে চিহ্নিত করা হয়)। বেইস নাম্বার ১১৪,৪৫৫,৮২৩ থেকে ১১৪,৪৫৫,৮৩৮ এর মধ্যে, অর্থাৎ‌ এই ১৫টা বেসের মধ্যেই এই জোড়া লাগার স্থান — হিশাব এতটাই চুলচেরা (পড়ুন ডিএনএ-চেরা)। দুইটা যে সেন্ট্রোমিয়ার থাকার কথা, তা-ও পাওয়া গেলো, যার একটা অকেজো। আর এই অকেজো সেন্ট্রোমিয়ারের সিকোয়েন্স মিলে যায় শিম্পাঞ্জির ১৩ নাম্বার ক্রোমোসোমের সঙ্গে। তাহলে কী বুঝা গেল? আসলে সব বিজ্ঞানীই ষাঁড়।

সায়েন্টিফিক থিওরির একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর প্রেডিক্টিভ পাওয়ার, মানে কীরকম ভবিষ্যদ্বানী করতে পারে যেটা পরীক্ষা করে দেখা যায়। বিবর্তন তত্ত্বের অজস্র প্রেডিকশন আছে। এটা এগুলোর মধ্যে প্রমাণিত মাত্র একটা। বাকিদের দুয়েকটা নিয়ে অন্য কোনদিন বলবো।